মামুনুর রশীদ মামুন, কুড়িগ্রাম: বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে অতিষ্ঠ উত্তরের দরিদ্র পীড়িত জেলা কুড়িগ্রামের মানুষ। গত কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ তখন বিদ্যুতের এমন আসা-যাওয়ার লুকোচুরি খেলায় দূর্বিষহ হয়ে উঠছে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বাস করা লক্ষ লক্ষ মানুষের জন-জীবন।
প্রয়োজনীয় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম বলে বিদ্যুতের এই লোডশেডিং সমস্যা বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
উত্তরের দরিদ্র পীড়িত জেলাটিতে দুর্ভোগের যেন অন্ত নেই, একদিকে অসময়ে আগাম বন্যা থেকে সৃষ্ঠ মৎস, কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা , বানভাসি মানুষের খাদ্যাভাব, বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব,জীবন বাঁচানোর নিশ্চয়তার অভাব, রোগ-শোক প্রভৃতি যখন কাঁধে ভর করছে তখন বিদ্যুৎ বিপর্যয় যেন নতুন করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতার বাড়ি-ঘর গুলোকে অন্ধকার করে দিয়ে নতুন সংকট যোগ করেছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে নানাবিধ সমস্যার সাথে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং, “এখানে বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মাঝে আসে”–এই প্রবাদটি যেন কুড়িগ্রাম জেলা বাসীর মনে স্থান করে নিয়েছে, বিদ্যুৎ গেলেই সবার মুখে মুখে একই কথা, “আমাদের এখান থেকে বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মাঝে আসে”।
ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে যাওয়ায় কেরোসিনের হারিকেন, হ্যাজাক, কুপি বাতি কিংবা মোমবাতির প্রচলন যখন নেই বললেই চলে তখন বিদ্যুতের এমন ভেলকিবাজি যেন তাদের জীবনকে আরও দূর্বিষহ করে দিয়েছে । ডিজিটাল বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ছাড়া জীবন যখন এক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার নাম, তখন বৈদ্যুতিক লোডশেডিং এ পরে জেলার বিভিন্ন এলাকার লোকজন তাদের নিকট জনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ব্যবহৃত একমাত্র মোবাইল ফোনটিতে চার্জ দিতে না পারায় আরেকটি নতুন সংকটে পড়েছে।
উলিপুর উপজেলার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, দিনে-রাতে কতবার যায় আসে এর কোন হিসাব নেই। খুব সমস্যা হচ্ছে।
রাজিবপুর উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী আবু সাঈদ জানান, আজকে সকালে গেছিল দুপুর বারোটায় আসছে, প্রায় ৬-৭ দিন থেকে বিদ্যুতের এই অবস্থা চলছে ।
ভুরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহীন আলম, ওয়াহেদ আলী, লিটন মিয়া সহ আরও অনেকে জানান, কারেন্ট গেলে তো আসে না, দীর্ঘ সময় না থাকলে অন্ধকারে বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যা হয়, মোবাইলে চার্জ না দিতেও সমস্যা হচ্ছে, ফ্রিজে রাখা জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
রাজারহাট উপজেলার বাসিন্দা আনিসুর রহমান, হামিদুল ইসলাম সহ আরো অনেকে জানান, ভ্যাপসা গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় চরম বিপদে আছি, ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব জায়গায় এর প্রভাব পড়ছে, বিশেষ করে ওয়েল্ডিং এর কাজ করার লোক গুলো খুব বিপদে আছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার কম্পিউটারে কাজ করা এরশাদুল হক জানান, কারেন্ট না থাকলে তো ব্যবসা-বাণিজ্যে খুব সমস্যা হচ্ছে, একবার গেলে দুই ঘন্টা থাকেনা, আবার আসে অল্প সময়ের জন্য আবার চলে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সোমবার (০৪ জুলাই) কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ এর জেনারেল ম্যানেজার মহিতুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে আদিতমারি জোনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোস্তফা কামাল বলেন, স্যার অসুস্থ।
বিদ্যুতের লোডশেডিং এর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, গ্যাস স্বল্পতার কারণে জেনারেশনের সমস্যা হচ্ছে, আমাদের ৮৫ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও ২ গ্রীড মিলে ২৮ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ৩২ মেগাওয়াট পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে, জেনারেশনের কমবেশির কারণে এ পরিমাণটা ভেরি করছে, এ কারণে সমস্যা হচ্ছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।